⚖️ গুমের সাজা যাবজ্জীবন, মৃত্যুতে ফাঁসি: আসছে কঠোর ‘গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশ’

এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট

⚖️ গুমের সাজা যাবজ্জীবন, মৃত্যুতে ফাঁসি: আসছে কঠোর ‘গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশ’

“নির্দেশদাতার পাশাপাশি সহায়তা-প্ররোচনার জন্যও সমান সাজা ♦ থাকছে না জামিন ও আপসের সুযোগ ♦ রাখা হচ্ছে ক্ষতিপূরণের বিধান”

গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরের পর এবার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুম বন্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের পথে বাংলাদেশ। ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামের প্রস্তাবিত এই আইনে গুমের জন্য যাবজ্জীবন থেকে শুরু করে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত সাজার বিধান রাখা হচ্ছে। আরও আছে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং বাধ্যতামূলক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা। এই আইন হবে জামিন-অযোগ্য এবং আপস-অনুপযোগী—জানুন বিস্তারিত এই বিশেষ প্রতিবেদনে…

📜 অধ্যাদেশের মূল বিধানসমূহ

⚖️ শাস্তির মাত্রা

  • গুমের শাস্তি: যাবজ্জীবন + ৫০ লাখ টাকা জরিমানা
  • গুমের ফলে মৃত্যু: মৃত্যুদণ্ড + ১ কোটি টাকা জরিমানা
  • নির্দেশদাতা ও সহায়তাকারী সমান দায়ী

🧑‍⚖️ বিচার প্রক্রিয়া

  • জামিন অযোগ্য ও আপস অনুপযোগী
  • বিশেষ গুম প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল
  • আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠন

💸 ক্ষতিপূরণ

  • গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবার
  • সরকারি তহবিল থেকে প্রদান
  • অতিরিক্ত নাগরিক মামলার সুযোগ

“একটি ঐতিহাসিক তথ্য: বাংলাদেশ গত বছর ২৯ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে (International Convention for the Protection of All Persons from Enforced Disappearance) কোনো শর্ত ছাড়াই স্বাক্ষর করে।”

📌 আইন প্রণয়নের পটভূমি

আন্তর্জাতিক চাপ

গত দেড় দশক ধরে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশে গুমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র সমালোচনা করে আসছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হলে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও আলোচিত হয়।

অভ্যন্তরীণ দাবি

গুমের শিকার পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিচার ও জবাবদিহির দাবি জানিয়ে আসছিল। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম তদন্ত কমিশনে ১,৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়ে। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ৭৩% ভুক্তভোগী ফিরে এলেও ২০৪ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।

🔍 গুম তদন্ত কমিশনের প্রধান তথ্য

১,৬৭৬টি
অভিযোগ জমা

৭৫৮টি
তদন্ত সম্পন্ন

৭৩%
ফিরে এসেছেন

২০৪ জন
নিখোঁজ রয়েছেন

সূত্র: গুম তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন (জুন ২০২৫)

🏛️ বাস্তবায়ন কাঠামো: কীভাবে কাজ করবে আইন?

🕵️‍♂️ তদন্ত কাঠামো

  • বিশেষ তদন্ত ইউনিট গঠন
  • সাক্ষ্যদাতা সুরক্ষা ব্যবস্থা
  • ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ
  • আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

⚖️ বিচারিক ব্যবস্থা

  • বিশেষ গুম প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনাল
  • দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া
  • বিচারকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ
  • আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ

🛡️ জাতীয় গুম প্রতিরোধ কমিশন

প্রস্তাবিত আইনে একটি স্বাধীন ‘জাতীয় গুম প্রতিরোধ কমিশন’ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই কমিশনের কাজ হবে গুম প্রতিরোধে নীতি প্রণয়ন, তদন্ত তদারকি করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান। কমিশন সরাসরি সংসদকে রিপোর্ট করবে এবং এর নিজস্ব তদন্ত ক্ষমতা থাকবে।

🧠 আইন বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন

ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল

“গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষরের পর এ ধরনের আইন প্রণয়ন বাংলাদেশের জন্য একটি বাধ্যতামূলক দায়িত্ব। বিগত সময়ে যেসব গুমের ঘটনা ঘটেছে, তার বিচারে এই আইন জরুরি ছিল। তবে শুধু আইন করলেই হবে না, এর সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।”

ড. শাহদীন মালিক

“এই আইনের সফলতা নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের ওপর: প্রথমত, তদন্তের স্বাধীনতা এবং দ্বিতীয়ত, বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা। গুমের মতো সংবেদনশীল অপরাধের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধ করতে হবে।”

⚖️ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড

জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গুমকে একটি স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে, এর জন্য দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশটি এই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পূরণের দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

⏭️ পরবর্তী পদক্ষেপসমূহ

১. মতামত সংগ্রহ

আইন খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণ

২. চূড়ান্তকরণ

মতামত বিবেচনায় নিয়ে চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত

৩. অনুমোদন

মন্ত্রিসভা ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন

৪. গেজেট প্রকাশ

অধ্যাদেশ হিসেবে গেজেটে প্রকাশ

আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গতকাল রাজধানীর বিচার প্রশাসন ইনস্টিটিউটে প্রস্তাবিত আইনের ওপর একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে খসড়ার ভুলত্রুটি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং অংশীজনদের সাত দিনের মধ্যে বিস্তারিত মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

🔮 একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা?

গুম প্রতিরোধ অধ্যাদেশ বাংলাদেশের আইনী ইতিহাসে একটি মাইলফলক হতে পারে। এটি কেবল একটি আইনই নয়, বরং একটি সামাজিক চুক্তি—যেখানে রাষ্ট্র নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব নিচ্ছে। তবে আইনের সাফল্য নির্ভর করবে এর সৎ ও নিরপেক্ষ বাস্তবায়নের ওপর। গুমের শিকার পরিবারগুলোর জন্য এটি ন্যায়বিচারের আশার আলো, আর ভবিষ্যতে গুম প্রতিরোধে এটি একটি শক্তিশালী প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে।

প্রশ্ন হলো—এই আইন কি বাংলাদেশে গুমের কালো অধ্যায়ের সমাপ্তি টানবে, নাকি হবে কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ?

👉 এই রিপোর্টটি শেয়ার করুন

গুম প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করতে আপনার নেটওয়ার্কে এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন

© ২০২৫ NRG ALFA ZONE | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

তথ্যসূত্র: আইন মন্ত্রণালয়, গুম তদন্ত কমিশন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, জাতিসংঘের গুমবিরোধী সনদ, বিশেষজ্ঞ সাক্ষাৎকার

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top