নগদের জালিয়াতি কেলেঙ্কারি: বাংলাদেশের ফিনটেক নাটকের ভিতরের গল্প
একদম সিনেমার গল্পের মতো ঘটনা! বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) নগদের বিরুদ্ধে ২৩০০ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নগদের পেছনে লেগেছে, অভিযোগ করে যে তারা টাকা পাচার করেছে, আত্মসাৎ করেছে, আর জাল ই-মানি বানিয়েছে। কিন্তু এই গল্পে কি শুধু নগদই খলনায়ক, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে আরেকটি নাটক? চলুন, পপকর্ন হাতে এই ফিনটেক থ্রিলারের ভেতরে ঢুকে পড়ি!
নগদের উত্থান: ফিনটেকের সুপারহিরো?
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসে নগদ যাত্রা শুরু করে। মাত্র চার বছরে এই কোম্পানি এমএফএস বাজারের ৩০-৪০% দখল করে ফেলে। কীভাবে? বাংলাদেশ ডাক বিভাগের নামের জাদু, সুপার-আক্রমণাত্মক মার্কেটিং, আর প্রতি হাজারে মাত্র ৯.৯৯ টাকার ক্যাশ-আউট রেট! এতে বিকাশের একচেটিয়া সাম্রাজ্য ধাক্কা খায়, যারা ২০১১ সাল থেকে বাজারে রাজত্ব করছিল। নগদের স্লোগান “দেশি নগদে, বেশি লাভ” মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
নগদের ডাক বিভাগের সাথে অংশীদারিত্ব আর বিএমডব্লিউ গাড়ি থেকে জমি দেওয়ার মতো চটকদার ক্যাম্পেইন এটিকে চার বছরে ইউনিকর্ন কোম্পানিতে পরিণত করে, যার মূল্যায়ন ১০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়!
জানেন কি? নগদ একবার ঢাকায় বিএমডব্লিউ গাড়ি ট্রাকে চড়িয়ে শোভাযাত্রা করেছিল, আর তিনজন ভাগ্যবান গ্রাহককে জমি উপহার দিয়েছিল!
কেলেঙ্কারির টুইস্ট: ২৩০০ কোটি টাকার হাঙ্গামা
এখন আসল নাটক শুরু! দুদকের তদন্তে ধরা পড়ে যে নগদ ২৩০০ কোটি টাকার জালিয়াতি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নগদ ৬৪৫ কোটি টাকার জাল ই-মানি বানিয়েছে, মানে এমন ডিজিটাল টাকা যার পেছনে ব্যাংকে কোনো আসল টাকা নেই। আরও ১৭১১ কোটি টাকা ৪১টি ভুয়া ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার বড় অংশ সম্ভবত বিদেশে পাচার হয়েছে।
নগদের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, সাবেক সিইও তানভীর আহমেদ মিশুক, আর “পই পই স্যার” খ্যাত সোলাইমান সুখনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, নগদ রাজনৈতিক প্রভাব আর অস্থায়ী লাইসেন্সের আড়ালে প্রতিদিন ৯০০ কোটি টাকার লেনদেন করছিল।
ডাউনফল আর বিকাশের কামব্যাক
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদের বোর্ড ভেঙে একজন প্রশাসক বসায়। তানভীর মিশুক আর পই পই স্যারকে সাসপেন্ড করা হয়। নগদের টিভি বিজ্ঞাপন থেকে ফেসবুক অ্যাড—সব বন্ধ! ফলাফল? নগদের কার্যক্রম মন্থর হয়ে যায়। এই ফাঁকে বিকাশ তাদের সেন্ড মানি চার্জ ৫ টাকা থেকে ১০০% বাড়িয়ে ১০ টাকা করে দেয়। বিকাশ যেন বলছে, “আমি ফিরে এসেছি, বেবি!”
নগদের সাবেক সিইও ফেসবুকে এক ভিডিওতে ক্ষোভ ঝেড়ে বলেছেন, নতুন বোর্ড আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিকাশের এক বোর্ড মেম্বারের প্রভাবে নগদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের মার্কেটিং পুরো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা কি ফেয়ার?”
গুজব আছে, নগদের বিজ্ঞাপন বন্ধ হওয়ায় এখন তাদের অ্যাড বাজেট গিয়ে জমা হচ্ছে কোনো গোপন কফি ফান্ডে!
নগদ: খলনায়ক না ষড়যন্ত্রের শিকার?
অভিযোগগুলো যতটা গুরুতর, ততটাই চিন্তার বিষয় যে নগদ হয়তো একটা বড় ষড়যন্ত্রের শিকার। নগদের দ্রুত উত্থান বিকাশের মনোপলি ভেঙে দিয়েছিল, গ্রাহকদের জন্য কম ফি আর বেশি সুবিধা নিয়ে এসেছিল। নগদকে মন্থর করলে বাংলাদেশের ফিনটেক শিল্প পিছিয়ে পড়বে, কারণ প্রতিযোগিতাই উদ্ভাবনের চাবিকাঠি।
নগদের লেনদেন এখন সরকারের কঠোর তত্ত্বাবধানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সাল থেকে দেশে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়নি, কারণ সরকার অর্থনীতি বাঁচাতে সবসময় এগিয়ে আসে। সম্প্রতি ছয়টি দুর্বল ব্যাংকের জন্য ২২,৫০০ কোটি টাকা ছাপানো হয়েছে।
নগদের ভবিষ্যৎ: ফিরে আসবে কি সুপারহিরো?
বাংলাদেশ ব্যাংক নগদকে ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পুরোদমে কাজ করছে। একটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে, আর নতুন বোর্ড গঠন করা হচ্ছে। লক্ষ্য? নগদকে স্বচ্ছ আর শক্তিশালী করে বিকাশের মনোপলির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া।
গ্রাহকদের জন্য সুখবর—নগদে লেনদেন এখনও নিরাপদ! সরকারের তত্ত্বাবধানে আপনার টাকা একদম সেফ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, “আমরা নগদকে একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এটি আমাদের ফিনটেক শিল্পের জন্য একটি মডেল হবে।”
যেহেতু আমরা নতুন যাত্রা শুরু করছি তাই আমাদের যেকোনো ক্ষেত্রে ভূল হতে পারে। ভূল হলে দয়া করে জানাবেন। অনুসরণ করুন!